
রিভিউ লেখার আনুমানিক সময় : ২০১৭-১৮ সাল
এস্টেলা পিপকে যেভাবে কাঁদিয়েছে, তাতে আমারও দুঃখবোধ হয়েছে, পিপের জন্য। এস্টেলাকে পিপের ভালো লেগেছিল, কিন্তু পিপ ঠিকই বুঝতে পেরেছিল, মেয়েটা খুব অহংকারী। এস্টেলা ছিল পিপের সমবয়সী। আর তারা দুজনেই তখন অল্পবয়সী ছিল।
এস্টেলার অহংকারকে ধুলোয় মেশানোর জন্য অল্পবয়সী পিপ প্রতিজ্ঞা করেছিল, পিপ গিয়েছিল তার বয়সী আরেকজন মেয়ের কাছে যে অনেক পড়াশোনা করেছে, অনেককিছু পারে। পিপকে সেই মেয়েটি কথা দিয়েছিল সে যা জানে সবই শেখাবে। একদিন তার সাথে ঘুরতে বেরিয়ে পিপ তাকে বলেছিল, আমি যদি তোমাকে ভালোবাসতে পারতাম! কিছু মনে করো না, খোলাখুলিই বললাম। তখন মেয়েটি পিপকে উপদেশ দিয়েছিল, বলেছিল, আমি কিছু মনে করিনি। তুমি যদি চাও অনেক যোগ্য হবে তা ভালো কথা, কিন্তু তুমি এস্টেলার অহংকারকে পাত্তা না দিলেই ভালো করবে। সে যা ইচ্ছা বলে তোমাকে অপমান করতে চাক না, তোমার অপমানিত বোধ করা উচিত নয়।
পড়ছিলাম, ভাবছিলাম। ভাবছিলাম, যে আমাকে ভালোবাসতে পারবে তাকে রেখে, যে আমাকে পাত্তা দেবে না তাকে ভালোবাসতে যাওয়ার কী মানে! এস্টেলার মতো এই মেয়েটি হয়তো সুন্দর নয়, তাতে কী হলো, সে তো অনেক ভালো। আর এস্টেলা হলো অহংকারী, সে পিপের দিকে তাকায় ঘৃণার দৃষ্টিতে, পিপকে অনেক নীচ ভাবে। অথচ এই মেয়েটি পিপকে বলে, তুমি নীচ নও, বরং যে এই কথা তোমাকে বলে সেই নীচ মানসিকতার।
একসময় পিপ খুব করে তার ভুল বুঝতে পেরেছিল। সে তখন যুবক। কিন্তু দেরি হয়ে গেছে। লন্ডন থেকে নিজের গ্রামে ফিরে এই মেয়েটির খোঁজ করে পায়নি, তার মৃত বোনের বাড়িতে গিয়ে দেখতে পেয়েছে দুলাভাই এই মেয়েটিকেই বিয়ে করেছে। পিপ তার বোন ও দুলাভাইয়ের কাছেই কৈশোরে পদার্পণ করেছিল। এক দুর্ঘটনায় তার বোন মারা যায়। দুলাভাই পিপের অনেক আপন ছিল, পিপকে খুবই ভালোবাসতেন তিনি। পিপ যেদিন সেই মেয়েটি এবং দুলাভাইকে স্বামী-স্ত্রী হিসাবে দেখতে পেল, সেদিনই তাদের বিয়ে হয়েছে। পিপের মন ভেঙে গেল। তার এত আশা করে ফিরে আসা বৃথা হলো। তবে পিপ তার ভাইকে বলল, তুমি দুনিয়ার সবচেয়ে ভালো মানুষকে স্ত্রী হিসাবে পেয়েছ। মেয়েটিকে বলল, তুমি দুনিয়ার সবচেয়ে ভালো মানুষকে স্বামী হিসাবে পেয়েছ। কিন্তু তোমাদের যখন সন্তান হবে, তাকে আমার কথা বলো না। আমি তোমাদের এত দুঃখ দিয়েছি, তা কখনো বলো না।
পিপ ভদ্র-সভ্য মানুষ হওয়ার জন্য একদা গ্রাম ছেড়ে লন্ডনে চলে গিয়েছিল। সে অনেক ঘোরালো-প্যাঁচানো কাহিনির কথা। অনেক আশা-আকাঙ্ক্ষায় ভরা ছিল সেই কাহিনি। কিন্তু শেষে…। পিপের খরচ বহন করছিলেন কে, তা পিপের জানা ছিল না। পিপকে মাসে মাসে টাকা দিচ্ছিলেন কে, পিপ কিছুতেই সঠিক অনুমানটা করতে পারেনি। পিপ মনে করেছিল, তাকে সম্ভবত তিনিই খরচ দিচ্ছেন, যিনি খরচ দেন এস্টেলাকে। পিপ সব খরচাদি পাচ্ছিল একজন উকিলের মাধ্যমে, যিনি কিছুতেই বলেননি কে সেই মক্কেল যিনি পিপের খরচ বহন করেন।
এস্টেলা বড় হয়েছিল পালক মায়ের কাছে। আসল মা কে তা এস্টেলার জানা ছিল না। এস্টেলা জানত না তার পিতার পরিচয়। তার পালক মা তাকে যেভাবে বড় করেছিলেন, গড়ে তুলেছিলেন, সে সেভাবেই বড় হয়েছিল, গড়ে উঠেছিল। পালক মা এস্টেলার যে গুণ দেখতে চেয়েছিলেন তাই এস্টেলা ধারণ করেছিল। পালক মা চেয়েছিলেন এস্টেলাকে দিয়ে কোনো যুবকের হৃদয় কাড়তে, যুবকের প্রাণের পাত্রী বানাতে, তাতে তিনি সফল হয়েছিলেন। সেই অল্প বয়সে এস্টেলাকে প্রথম দেখে মুগ্ধ হয়েছিল পিপ। আর পিপকে এস্টেলার পালক মা-ই নিজের বাড়িতে এস্টেলাকেই দেখানোর জন্য ডেকে নিয়েছিলেন। তো, এস্টেলাকে পিপের ভালো লেগে গিয়েছিল। সে আর কখনো তাকে ভুলতে পারছিল না। একসময় পিপকে আন্তরিকতার সাথেই সতর্ক করেছিল এস্টেলা, এস্টেলার হৃদয় বলে কিছু নেই। তার মা তাকে যেমন বানিয়েছে সে তেমনই হয়েছে। তার মা যখন যেমন যা চায় সে তা করে থাকে। এস্টেলার প্রেমে পড়িয়ে কোনো যুবককে পরে কষ্ট দেওয়াই তার পালক মায়ের ইচ্ছা ছিল, পিপকে এ কথা তার এক শুভাকাঙ্ক্ষী বন্ধুও বোঝাতে চেয়েছিল। কিন্তু পিপ ছিল তখন অপারগ।
পিপ প্রথম খুব পেরেশান হলো, যখন সে নিশ্চিতভাবে জানল তাকে খরচ দিচ্ছেন এস্টেলার পালক মা নন এবং এস্টেলার পালক মা পিপকে এস্টেলার জন্যই যোগ্য করে তুলছেন না। পিপের খরচ বহনকারী অন্য একজন মহৎপ্রাণ। অতঃপর এস্টেলার বিয়ে হলো এক বাজে ছেলের সাথে। আর তার অনেক পর পিপ জানল তাকে খরচ প্রদান করা মানুষটি এস্টেলার বাবা। বাবা জানতেন না সেই ছোট্টকালে দেখা তার মেয়েটা জীবিত ছিল। যখন জেনেছেন এক মুহূর্ত অবসর পাননি শেষনিশ্বাস ত্যাগ করার আগে। বিচারের নামে প্রহসনে জেলখানার ভেতর মৃত্যুশয্যায় শায়িত এস্টেলার বাবাকে পিপ শুধু বলতে পেরেছিল, আপনার মেয়ে বেঁচে আছে। আমি তাকে ভালোবেসেছি।…
বইটি সংগ্রহ করতে নিচের অ্যাফিলিয়েট লিংক ব্যবহার করুন—
চার্লস ডিকেন্স : গ্রেট এক্সপেকটেশন
(বইয়ের নামের ওপর ক্লিক করুন)