
তোমাদের দুজনকে যথাসম্ভব সহায়তা আমি করব—এটা শুনে হয়তো তুমি ভেবেছ, আমি বড় মহৎ মনের মানুষ।
কিন্তু বন্ধু, আমি যে বড় স্বার্থপর৷ শুধু নিজের নাম অমর করে রাখতেই যে তোমার মঙ্গল আমি চেয়েছি। নইলে কেন ওরা বলে, ‘ফারজানকে স্যালুট?’
দেখো, তুমি যা কাঁটারূপে নিয়েছিলে, আমি তা পরিবর্তন করে দিয়েছি ফুলে ফুলে। কাঁটা হলে এ তোমরা মাড়িয়ে যেতে। কিন্তু ফুল যে তোমাদের ওপর বর্ষিত হবে গো!
তোমরা জানো না গো, তোমরা জানো না, আমাকে জড়িয়ে ধরে কী আক্ষেপটাই-না দোস্ত করেছে। আমাকে ঝাঁকিয়েছে, বারবার শুধায়েছে, কীভাবে তুই পারলি এতটা নিষ্ঠুর হতে?
আচ্ছা, তুমিই বলো তো? যদি আমি এর বিপরীতটা করতাম, ওটাই কি হতো না আমার নিষ্ঠুরতার বহিঃপ্রকাশ?
কই? আমি তো কাঁদিনে একবারও! ফেলিনে চোখের পানি একফোঁটাও!
যে ফুল ঝরে গেছে, লাভ কী তার জন্য ভিজিয়ে দুচোখ? আল্লাহ তাআলা কি রহমকারী নন? তিনি কি আমাকে রক্ষা করেননি আগুনে ঝাঁপিয়ে পড়া হতে?
বন্ধু আমার, স্বার্থ আমার তবে বুঝলে? না বুঝলে ওই দেখো, কীভাবে সবাই অশ্রু ঝরায়ে লাল চক্ষু নিয়ে দণ্ডায়মান! সারাটা শহর তুমি, তোমরা ঘুরেছ আশ্চর্য অনুভূতি বুকে নিয়ে। আমি তখন ল্যাম্পপোস্টের আলোয় দেখেছি নিজের ছায়া, হেঁটে বেড়িয়েছি সাহসিকা হয়ে একাকী রাস্তায়। অথচ আমি নাকি সেই ভীতু যার ছিল না বিছানা থেকে উঠে আঁধারে দরজা বন্ধ করার সাহস।
আমার নাকি কষ্টে মরে যাওয়া প্রয়োজন ছিল? কেন বলো তো? কোন দুঃখে আমি মরতে যাব? আমি তো সেই বন্ধু হতে চেয়েছি ইতিহাসের পাতায় যার নাম লেখা রবে স্বর্ণাক্ষরে। এই তুচ্ছ বিষয়ে মরে যাওয়া আমার কি মানায়, বলো? বড় ইচ্ছা, সেই শুভলগ্নে মেহমানদারি এই আমিই করব। তোমরা না হয় চাঁদ দেখো, পূর্ণিমার চাঁদ। আমি না হয় ঘুমিয়ে গেলাম হাসতে হাসতে? অবচেতন মন বলতে থাকবে, আমি বন্ধু, আমিই বন্ধু, আমি চির অমর তোমাদের হৃদয়ের পাতায়।
এতকিছু বললাম, এগুলাই সবার চোখে পড়বে, জানো? তবে আমরা বাস্তবে যাকে ত্যাগ করতে দেখি, অনেক সময় ত্যাগ করে তার বিপরীতজন। আমাদের ক্ষেত্রেও এমনটা হয়েছে। ত্যাগ করেছ তুমি। তুমি আমাকে পৌঁছিয়ে দিয়েছ রহমতের দোরগোড়ায়। জীবন নামক গাছে প্রথমবার ফুল আসতেই তুমি দাওনি তা ঝরে যেতে অকালেই। আমি সুযোগ পেয়েছি পরিচর্যা করার।
তোমাকে ধন্যবাদ দিয়ে ছোট করা কি আমার উচিত হবে?
বারো।। চার।। তেইশ।।