
রিভিউ লেখার সময় : জানুয়ারি ২, ২০১৯
নিক পিরোগের ‘হেনরি বিনস’ সিরিজ একটি বিশেষত্ব ধারণ করতে পেরেছে। এক নতুনত্ব রয়েছে এই সিরিজটিতে। এই সিরিজের প্রধান চরিত্র হেনরি বিনসের রয়েছে ‘হেনরি বিনস’। হেনরি বিনসের ‘হেনরি বিনস’ কী তা জানতে হলে বইটি পড়তে হবে। এই রহস্যটি জানতে পাঠকের সম্মুখীন হতে হবে নতুন আরও রহস্যের। হঠাৎ করে কাহিনির মোড় নানাদিকে ঘুরে যাবে দেখতে পাবেন পাঠক। সেটি সত্যি দারুণ।
হেনরি বিনস সিরিজে একটা বিশেষ সংস্কৃতি, এ ক্ষেত্রে নতুনত্বের কিছু নেই, বিয়েবহির্ভূত একত্র বসবাস। এটা কোনো ভালো দিক নয়। হওয়ার কথাও নয়। কেবল এই দিকটা লক্ষ করে আমি কোনো পাঠপ্রিয় ব্যক্তিকে এই সিরিজের বইগুলো পড়তে উৎসাহ দিতে পারি না। তা ছাড়া পড়ার সময় আমার মনে হয়েছে, এসব পড়ে যুগসমস্যার সমাধান করার যোগ্যতা আমার অর্জিত হবে না। তথাপিও অসম্পূর্ণ তিন দিনে সম্পূর্ণ পাঁচটি বই পড়ে ফেলেছি।
বইয়ের নামেও নতুনত্ব রয়েছে। প্রথম বইটি হলো ‘3.00 am’, দ্বিতীয় বই ‘3.10 am’, তৃতীয় বই ‘3.21 am’, চতুর্থ বই ‘3.34 am’ এবং পঞ্চম বই ‘3.46 am’। বইয়ের নাম 3.00 am দেখে প্রথমত সন্দেহ হয়েছিল, আদতেও এটা কোনো বইয়ের নাম কি না। নিশ্চিত হওয়ার পর শুধু বইয়ের নামরহস্য উদঘাটনের জন্যই পড়তে আগ্রহী হয়ে উঠি।
প্রধান চরিত্র হেনরি বিনস সাধারণ মানুষ নন, কারণ তিনি প্রডিজি। তিনি স্বাভাবিক মানুষ নন, কারণ তার রয়েছে ‘হেনরি বিনস’। হেনরি বিনসের ছোটবেলার কাহিনিগুলো পরে জানা যায়। ঠিক কীভাবে তিনি নিজের নামের মতো ‘হেনরি বিনস’ নামক আরেকটি ‘জিনিসেরও’ অধিকারী হন তা পাঠক জানতে পারবেন বেশ পরে। তবে বইয়ের নামরহস্য শুরুতেই জানা হয়।
হেনরি বিনস দিনেরাতে মাত্র একঘণ্টা ঘুমান না। হ্যাঁ, ঠিকই পড়েছেন, সচেতনভাবেই ‘না’ লিখেছি। একঘণ্টাই কেবল তিনি ঘুমান না, বাকি ২৩ ঘণ্টা ঘুমিয়ে কাটান। আহ, থামুন। হেনরি বিনস কি এতটা সময় ঘুমিয়ে ‘কাটান’, না তাকে ‘কাটাতে হয়’ এই প্রশ্ন কি মনে আসে না? আসে। এর উত্তর জানতে হলেও 3.00 am-এর প্রথম দুয়েক পৃষ্ঠা পড়তে হবেই।
একটি ঘণ্টামাত্র জেগে হেনরি বিনস কী কাজ করেন তা জেনে কিন্তু অনুপ্রাণিত হবেন, সময়ের যথার্থ খরচ করার ব্যাপারে আপনার ধারণাই পালটে যাবে। কেবল একঘণ্টা সময় ব্যয় করে করেই একেকটা জটিল রহস্যের সমাধান তিনি করেছেন। কীভাবে করেছেন জানতে চান? বুঝতেই পারছেন, তারজন্য আমার পরামর্শ হবে বইগুলো পড়তে বলা! তবে একটু সাবধানে থাকতে হচ্ছে আরকি, যেমন উৎসাহদাতাকে, সাথে সকল পাঠককেও।
আমেরিকান সংস্কৃতির একটা বিষয় এখানে নতুন করে উপলব্ধি করেছি। আমেরিকা বিষয়ে বিষয়ভিত্তিক অধ্যয়নের সময় বুঝেছিলাম, আমেরিকান নারী ও পুরুষ বিয়ের পূর্বে পাত্র ও পাত্রীকে সর্বোচ্চ পরীক্ষা করে থাকে। পরীক্ষার পদ্ধতির ক্ষেত্রে অবশ্য নারীরাই অধিক ‘ভুক্তভোগী’ হয়। তবে সেটা তাদের জন্য সামান্যও সম্মানহানির কিছু নয়। বিয়ের পূর্বেই তারা ‘ঘর করে’, যাকে বিবাহিত জীবনকে টেস্ট করে বলা যায়। কী দুঃখজনক বিষয়। তথাপি যারা বিয়ে করে তারা সাধারণত বড় বিশ্বস্ত হয়। ‘খুব’ শব্দটি এড়িয়ে গেলাম। তবে হ্যাঁ, এই সিরিজে বিবাহিত জীবনেরও অবিশ্বস্ততা বড় করে চোখে পড়বে। বরং এ ক্ষেত্রে স্বয়ং হেনরি বিনসের পিতৃত্বের ব্যাপার পড়ে মাথা ঘুরে যেতে পারে।
সর্বশেষ, শেষ একটি বাক্য একটা নতুন রহস্যের দরজায় কড়াঘাত করেছে। আর বলবেন না, আমি নিজে পেরেশান হয়ে পড়েছি। চিন্তাভাবনা করেছি, বাক্যটা আবার-আবার পড়েছি, তারপর গুগল সার্চ দিয়েছি এই সিরিজের আরও পাঠকের রিভিউ পড়ার ইচ্ছায়, যে তারা এই বাক্যটা সম্পর্কে কিছু বলেছে কি না। কিন্তু সেরকম কোনো রিভিউ পাইনি। সবগুলো রিভিউ কেমন যেন ‘যান্ত্রিক’, তারা শুধু বইগুলো পড়ার ব্যাপারেই উৎসাহ দিতে পেরেছে কোনোমতে। তবে দুজন রিভিউ-লেখকের খানিক সমালোচনাও পড়েছি।
আচ্ছা, আমি একটা কাজ করি, ওই শেষ বাক্যটিও এখানে উল্লেখ না করি। আমার রিভিউ পাঠকের মনে তাহলে আরেকটু আকর্ষণ যোগ হবে! না, না, ঠিক পড়তে বলছি না বইগুলো। অবশ্য না পড়লে জানতেও পারবেন না। সেজন্য কী করার, রিভিউ লিখতে গিয়ে আমেরিকান সংস্কৃতির ‘তত্ত্বও’ আলোচনা ও সমালোচনায় নিয়ে এলাম। আমি এই সিরিজটিকে রেটিং দিচ্ছি ৩/৫। এটাকে ৪/৫ এবং ৫/৫ রেটিংও দেওয়া যায়। তা হবে পাঠকের রুচি অনুসারে। অতঃপর দ্রষ্টব্য, এই সিরিজের আরও বই পাওয়া যাবে আশা করি, সম্ভবত এখন যা লেখা হচ্ছে।
হেনরি বিনসের লেখক নিক পিরোগের বইসমূহ :
নিক পিরোগ : হেনরি বিনস বা থ্রি এএম সিরিজ ও অন্যান্য
(নামের ওপর ক্লিক করুন)