দিনলিপি

হারিয়ে যাওয়া এক মাছের বাজার

সুমাইয়া মীম

আমাদের এক মাছের বাজার ছিল!

অন্য কারও মালিকানাধীন ছিল না সেটা। ছিল একান্ত আমাদের নিজস্ব এক মাছের বাজার। পুরো একযুগ যে বাজারে রাজত্ব করে এসেছি আমরা গুটিকয়েক মানুষ।

আমাদের এক মাছের বাজার ছিল!

যে বাজারে কোনো মাছ বেচাকেনা হতো না। দাম নিয়ে কোনো দরকষাকষিও হতো না। হতো এক-আধটুকরো পেনসিল নিয়ে মারামারি আর টিফিন টাইমে খাবার নিয়ে কাড়াকাড়ি।

আমাদের এক মাছের বাজার ছিল!

যে বাজারে ছিল না আঁশটে আঁশটে গন্ধ। যে বাজারে ছিল না কোনো মাছির আনাগোনা। ছিল শুধু ছোট ছোট লাল-নীল কাগজের শত শত টুকরো আর প্রত্যেকের হাতে-পায়ে কিছু রংবেরঙের চিহ্ন!

আমাদের এক মাছের বাজার ছিল!

যে বাজারে ছিল পড়ার ফাঁকে ফাঁকে জমিয়ে আড্ডা, আর গল্প শুনতে শুনতে খিলখিলিয়ে হাসা। আবার হুজুরের ভয়ে ওড়নায় গিঁট দেওয়া।

আমাদের এক মাছের বাজার ছিল!

যে বাজারে ছিল বৃহস্পতিবারের মুড়ি আর গল্পের ফুলঝুড়ি। ছিল দুপুর ২টার সংবাদ, আর এক-আধবেলা ডালভাত।

আমাদের এক মাছের বাজার ছিল!

যে বাজারে ছিল খারেজির রং-চা

আর ঘুমে ঢুলঢুল হওয়া

হুজুরের বকা খাওয়া

আর খুব ইবারত টানা!

আমাদের এক সোনালি যুগ ছিল। যেখানে হুজুরদের দেওয়া কথিত মাছের বাজার নামক এক দরসগাহ ছিল।

ছিল হাসি, কান্না, দুষ্টুমি আর খুনসুটি।

ছিল অবুঝ দিনের দুষ্টু-মিষ্টি ঝগড়া।

ছিল একে অপরের সাথে পাল্লা দিয়ে পড়াশোনা।

আজ এক যুগ পরে হারিয়ে গিয়েছে আমাদের সেই সোনালি দিনের মাছের বাজার। হারিয়ে গিয়েছে আমাদের সেই মাছের বাজারের গুরুত্বপূর্ণ সদস্যরা। হারিয়ে গিয়েছি আমি পৃথিবীর ছোট্ট এক কোণে!

বড় হওয়ার পর সবারই একদিন না একদিন এই মাছের বাজারের কথা মনে পড়ে। মনে পড়ে অবুঝ দিনের পাগলামো আর মারামারি।

মনে পড়ে ফজিলতের এক-আধ খারেজি আর তাকমিলের টানা পড়া!

মনে পড়ে,

ভোরবেলার সেই খারেজি আর ফ্লাস্কভরতি চা।

মনে পড়ে,

বৃহস্পতিবারের বোলভরতি মুড়িমাখা!

এই এক জীবনের কথা কেউ কখনো ভুলতে পারবে না। সবারই কিছু না কিছু মধুর স্মৃতি জড়িয়ে থাকে ছেলেবেলার সেই মাছের বাজারের সাথে!

০৯.০৯.২০২৪

সোমবার

Series Navigation<< আম্মুর সাথে খুনসুটি
এই রচনাটি ‘দিনলিপি : সুমাইয়া মিম’ সিরিজের একটি অংশ। মোট 2 অংশে বিভক্ত এই সিরিজটি। বর্তমান অংশটির ক্রমিক হলো 2। হ্যাপি রিডিং!

Related Articles

Back to top button
error: উঁহু, কপি করতে চান নাকি!