
রিভিউ লেখার সময় : ডিসেম্বর ৩০, ২০১৮
জনপ্রিয় আমেরিকান লেখিকা লরা ইংগলস ওয়াইল্ডারের আত্মজীবনীমূলক একই উপন্যাস সিরিজের সাতটি গ্রন্থ ‘ফার্মার বয়’, ‘লিটল হাউজ অন দা প্রেয়ারি’, ‘অন দা ব্যাংকস অব প্লাম ক্রিক’, ‘বাই দা শোরস অব সিলভার লেক’, ‘দা লং উইন্টার’, ‘লিটল টাউন অন দা প্রেয়ারি’, ‘দিজ হ্যাপি গোল্ডেন ইয়ারস’। সবগুলো পড়ে শেষ করার পর অন্যরকম ভালোলাগা অনুভব করেছি। ব্যাপারটা এরকম হয়েছে যে, এখন অন্য কোনো গল্প-উপন্যাস পড়ে এই ভালোলাগার অনুভূতিটা ক্ষুণ্ন করতে চাইছি না। এখন অন্যকিছু মুখে দিয়ে এই স্বাদ নষ্ট করতে চাইছি না।
এটি অন্যরকম একটি সিরিজ। একদম অন্যরকম। বলতে পারব না আসলে কীরকম। সহজ-সরল বর্ণনাভঙ্গি। রহস্য উদঘাটনের উদ্দীপনা এতে নেই, তবু শেষটা কী হয় জানার জন্য উদগ্রীব হয়ে ছিলাম। শেষটা, না, একেবারে শেষের কথা বলছি না, প্রধান কাহিনির তো একটা শেষ আছে, তার কথা, পড়ে হৃদয়ে সুন্দর ভালোলাগা অনুভব করেছি, সহজ-সুন্দর। কী অবাক কাণ্ড, তারা দুজন কাউকে কেউ ভালোবেসেছে কখনো বলেনি, কিচ্ছু বলেনি, এত সহজে এবং কী স্বাভাবিকভাবেই কী হয়ে গেল!
মাঝে মাঝেই দুচোখ অশ্রুসিক্ত হয়েছে। না, মনে ব্যথা পেয়েছি বলে নয়। খুব খুশি হয়েছি বলেও নয়। ঠিক কেন, জানি না সে কথা। আমার ভালোলাগাই চোখে অশ্রু হয়ে ঝরেছে, তা নয়তো কী! আশা পূরণ হওয়া ভালো লেগেছে। হতাশা দূর হওয়া ভালো লেগেছে। ভালো লেগেছে ছোট্ট আলমানজোর অত অল্প বয়সের সফলতা, ছোট্ট লরার আশা ষোলো বছর বয়সে শিক্ষকতার সনদ নেওয়া। আমার ভালো লেগেছে আলমানজো জেমস ওয়াইল্ডারের একুশ বছর বয়সেই পূর্ণ প্রতিষ্ঠিত হওয়াটা এবং লরা ইংগলসের পনেরো বছর বয়সেই শিক্ষিকা হয়ে যাওয়া।
পৃথিবীর মুক্ত আলোবাতাস উপভোগ করে বড় হওয়া আমার খুব মনে লেগেছে। এমন একটি জীবন তো আমি চেয়েছি। আমাদের পড়াশোনার ধরাবাঁধা যান্ত্রিক পদ্ধতিই ব্যর্থ করে দিচ্ছে এমন সুন্দর জীবন পেতে। ভালো লেগেছে শীতকালের কনকনে শীতে ছোট্ট আলমানজোর স্কুলে যাওয়া এবং যখন প্রয়োজন তখন স্কুল কামাই দেওয়া। ভালো লেগেছে শহর থেকে দূরে, বনের ভেতরে, প্রেয়ারিতে, প্লাম ক্রিকে ছোট্ট লরা এবং মেরি ইংগলসের মায়ের কাছে, বাবার কাছে শিক্ষাগ্রহণ। সবার জন্য বনেবাদাড় থেকে বাবার শিকার ধরে এনে খাওয়ার ব্যবস্থা করা ভালো লেগেছে। বাবার জন্য কখনো কখনো আমিও উদ্বিগ্ন হয়ে পড়েছি ফিরতে দেরি হয়েছে বলে। আমার বড্ড হাসি পেয়েছে ‘বুক-চাপড়ানো দানবটা’ মনে করে গাছের গুঁড়ির মাথায় বাবার সজোরে আঘাত করার ঘটনাটায়। একবার তুষার ঝড়ের কারণে বাবাকে যে চারদিন পরে ফিরে আসতে হয়েছিল, একটি গর্তে এই চারদিন কাটিয়ে; শহর থেকে লরা-মেরির জন্য কেনা চকোলেটগুলো খেয়ে জীবন বাঁচিয়ে ফেরার কারণে, লরা-মেরি যে অশ্রুসিক্ত চোখে তাদের খুশি প্রকাশ করেছিল তা আমার খুব ভালো লেগেছে। একবার তাদের প্রতিবেশী, নাম কী যেন, আশি মাইল দূর থেকে ঝড়বৃষ্টি তুচ্ছ করে লরা-মেরির জন্য উপহার নিয়ে এসেছিলেন, তাও খুব ভালো লেগেছে।
শেষের দিকে মেরির অন্ধ হয়ে যাওয়া আমাকে ব্যথিত করেছিল, কিন্তু মেরিকে যখন দেখতে পেয়েছি সে সন্তুষ্ট রয়েছে, মেরি একটুও ব্যথিত নয়, তখন ভালো লেগেছে। মেরির জন্য লরার ত্যাগস্বীকার ভালো লেগেছে। আর পুলক অনুভব করেছি, যখন আলমানজোর বাগিতে লরা চড়তে পেরে একটি আশা পূরণ হয়েছে ভেবেছে এবং যখন আলমানজো লরাকে তার ব্যবসায়ের প্রয়োজনে তৈরি কার্ডটা দিয়েছে, লরা দিয়েছে আলমানজোকে তার নতুন ছেপে আসা পরিচয়কার্ড।
নতুন দেশের সুবিশাল খোলা এলাকাগুলোতে মানুষদের ক্লেইম করার পদ্ধতিটা, নতুন শহর গড়ে ওঠার প্রক্রিয়া ‘লিটল টাউন অন দা প্রেয়ারি’ পড়ে জেনেছি। শীতে এবং শীতকালের তুষারপাতে ও তুষারঝড়ে কী পরিস্থিতি তৈরি হতে পারে, বইগুলো পড়ে তা জেনেছি। বাড়ি থেকে বের হওয়ার সময় বাড়ি ফেরার সুবিধার জন্য দরজায় বাঁধা বড় দড়ি নিয়ে বের হওয়ার কথা পড়ে ভেবেছি, বাড়ি হারিয়ে যাওয়ার ভয় এতটা হতে পারে! এমনই হারিয়ে যাওয়ার দিনে আলমানজো এবং তার বন্ধুর অনেক দূর এলাকায় শহরবাসীর জীবন বাঁচানোর তাগিদে গমের সন্ধানে যাওয়া অনেক ভালো লেগেছে, খুশিতে মন ভরে গিয়েছে তারা গম নিয়ে ঠিক ফিরে আসতে পেরেছিল যখন।
‘ক্রুসেডের’ সময় ডাকাতের হাত থেকে আলমানজোদের এক পূর্বপুরুষকে প্রাণে বাঁচিয়ে দেওয়া মনজুর নামক এক আরবের নাম তাদের বংশানুক্রমে চলে এসে আলমানজো হওয়া এবং আলমানজো জেমস ওয়াইল্ডারের নামের অংশ নিয়ে লরার লরা ইংগলস ওয়াইল্ডার হয়ে যাওয়া ভালো লেগেছে। অনেক ভালো লেগেছে। কিন্তু শেষে লেখিকার তাদের দুজনকে বুড়ো বানিয়ে ‘মেরে ফেলাটা’ একটুও ভালো লাগেনি। তিনি এমন কেন করেছেন! এমন কেন করেছেন!! তবে আমার মনে আমি তাদের জীবন অনেক, অনেকদিন বাঁচিয়ে রাখব। তার জন্য যদি জীবনে আর কোনো উপন্যাস পড়া বাদ রাখতে হয় তা-ই রাখব ঠিক।
বইটি সংগ্রহ করতে নিচের অ্যাফিলিয়েট লিংক ব্যবহার করুন—
(বইয়ের নামের ওপর ক্লিক করুন)