
‘আশপাশ থেকে উঁকিঝুঁকি দিতে শুরু করল কৌতূহলী নাবিকেরা। অদ্ভুত এক দৃশ্য দেখছে—পাগড়ি-কুর্তা পরা এক কার্সেয়ারের বুকে ইংরেজ অভিজাত নারী! তার চেয়েও অদ্ভুত হলো—দুজনকে মানিয়েছে বেশ!’ এই দৃশ্যের মাধ্যমেই বইটির সমাপ্তি।
পাগড়ি-কুর্তা পরা কার্সেয়ার, তিনি একসময়ের সার অলিভার ট্রেসিলিয়ান। যাহ, তার পরবর্তী নামটা কী যেন! মরার মন, গেছি ভুলে! তা বাপু আমি আবার বইটা ঘাঁটতে যাচ্ছি নে।
সার অলিভার শাকের-আল-বাহার নামে সুখ্যাত ও কুখ্যাত হয়েছিলেন। বইয়ের বর্ণনা অনুযায়ী তাকে এক পরিস্থিতিতে পড়ে খ্রিষ্টধর্ম ত্যাগ করে মুসলমান হতে হয়েছিল এবং জলদস্যুতা গ্রহণ করতে হয়েছিল। শেষের দিকে অবশ্য পরিস্থিতির অনুকূলেও তিনি ইসলাম ত্যাগ করেননি।
ইংরেজ অভিজাত নারী চরিত্র হলেন রোজামুন্ড, পুরো নাম, যাহ, মনে নেই! না থাক। বুকে জড়িয়ে রাখা এই রোজামুন্ডকেই সার অলিভার ট্রেসিলিয়ানের অপহরণ করতে হয়েছিল। না, না, এটা কিন্তু আমার কাছে দোষের মনে হয়নি। আমি হলেও তাই করতাম বোধ করি। আমার, আমার মনে হচ্ছে যে, এবার পাঠক সার অলিভারসহ আমার ওপরও অভিশাপ দিতে শুরু করবেন! আল্লাহ, রক্ষা করো! আসলে তখন যে ব্যাপারটা ঘটেছিল, ওটা না করে কোনো উপায় ছিল না।
কাহিনির শুরুতেই কিন্তু তাদের পরস্পরের ভালোবাসার কথা পড়েছিলাম। সার অলিভারকে মাত্র একটি বছর অপেক্ষা করতে হচ্ছিল, তারপরই রোজামুন্ড সাবালিকা হবেন এবং তাকে সার অলিভার বিয়ে করতে পারবেন। তাদের বিয়ের কথা একদম পাকাপোক্তই ছিল। (প্রিয় পাঠকান-পাঠিকান, এবার সবার একটা দীর্ঘশ্বাস নেওয়া উচিত।) ঘটনাক্রমে সার অলিভারকে রোজামুন্ড ভুল বোঝেন এবং তার প্রতি ঘৃণা পোষণ করতে শুরু করেন। ক্ষোভে-দুঃখে অনন্যোপায় সার অলিভার রোজামুন্ডকে অপহরণ (একটু থামুন! পরে কিন্তু রোজামুন্ড নিজেই সার অলিভারের ব্যাপারে এরকম সাফাই গেয়েছেন, ‘ওটা অপহরণ ছিল না। আমি ইচ্ছে করেই তার সাথে গিয়েছিলাম। ওটা আমাদের পূর্বপরিকল্পিত ছিল।’ হাহা। তা বটে!) করে নিয়েছিলেন, তিনি চেয়েছিলেন নিজের অনুকূল পরিবেশে নিয়ে তাকে সবকিছু বোঝাবেন।
তারপর একটা বড় সমস্যার সৃষ্টি হলো, তাতে নিরুপায় সার অলিভার রোজামুন্ডকে দাসবাজারে পাঠালেন। অলিভার ট্রেসিলিয়ান রোজামুন্ডকে সেখানে না পাঠানোর ব্যাপারে যথাসাধ্য করেছেন, কিন্তু ব্যর্থ হয়েছেন। ঘটনাপ্রবাহ ছিল তার নিয়ন্ত্রণের বাইরে তখন। অবশ্য রোজামুন্ডকে দাসবাজারের নিলাম ডাকে সবাইকে ছাড়িয়ে সার অলিভারই কিনে নিতে পেরেছিলেন। কাহিনির এই পটভূমিকায় দাসবাজারের ঘৃণ্য রূপটা ফুটিয়ে তোলা হয়েছে। বইয়ের কাল্পনিক কাহিনির পুরো দাসব্যবসা ব্যথিত না করে পারেনি।
যুদ্ধজয়ের পর বিজিত যুদ্ধবন্দীদের জীবনের মূল্য হতে পারে তাদের দাস বানিয়ে নেওয়া। কিন্তু ‘যুদ্ধ’ যদি হয় দস্যুতা, তাতে বিজিতদের দাস বানিয়ে নেওয়া, তাদের নিয়ে দাসব্যবসা করা মেনে নেওয়ার মতো নয়। এই বইয়ে এই প্রকারের দাসব্যবসার কথাই বলা হয়েছে।
সেই যুগে দাসপ্রথার স্বীকৃতি অনেক মানুষের জীবনও রক্ষা করেছে। কারণ অন্ধকারের পিশাচরা যেকোনো যুদ্ধজয়ের বিজিত অঞ্চলে ব্যাপক গণহত্যা চালাত, নির্বিচারে নির্দোষ মানুষকে হত্যা করতে সামান্য দ্বিধা করত না। সেই বিজিত মানুষদেরই না হত্যা করে দাসবাজারে বিক্রি করা হলে সেটা তাদের জন্য কল্যাণকরই হতো। ইসলাম আসার পর এই বিষয় অনেক গুরুত্ব পেয়েছে। মুসলমান বিজয়ীগণ বিজিত অঞ্চলে কখনোই গণহত্যার তাণ্ডবলীলা চালাননি। এজন্যই ইতিহাসের দিকে তাকালে দেখা যাবে, গত ইরাক-আফগান যুদ্ধে যে পরিমাণ মানুষ আমেরিকানদের হাতে নিহত হয়েছে তার শতভাগের একভাগও ইসলামের তেরোশ বছরের ইতিহাসে নিহত হয়নি। কীভাবে তা সম্ভব হলো? মুসলমান বিজয়ীগণ বিজিতদেরকে দাস বানিয়ে নিয়েছিলেন। বিজিতদের দাস বানিয়ে নেওয়ার নিয়ম থাকার ফলে বিজিত ও বিজয়ীরা উভয়েই লাভবান হয়েছে।
বইটি পড়ে আমি সিদ্ধান্তে আসতে পারিনি, লেখক কি আমাদের ধর্মের প্রতি বিদ্বেষ ঢেলেছেন, না কৌশলে ইসলামের প্রতি তার হৃদয়ের গহিনতর শ্রদ্ধাবোধ প্রকাশ করেছেন।
বইটি সংগ্রহ করতে নিচের অ্যাফিলিয়েট লিংকটি ব্যবহার করুন—
(বইয়ের নামের ওপর ক্লিক করুন)