ভূগোল

উসমানি দুটি প্রাসাদ

মাসউদ আহমাদ

বিশেষ সাম্রাজ্য, রাজবংশের রুচির ওপর তাদের প্রাসাদগুলোও গড়ে ওঠে। আব্বাসি খেলাফত, স্পেনের উমাইয়া যুগ, বা সেলজুক রাজবংশের শাসনামলে তৈরি প্রাসাদগুলোর মতো উসমানি যুগের প্রাসাদেও স্বতন্ত্র রুচি রয়েছে৷ উসমানি আমলের সাগরতীরে তৈরি প্রাসাদগুলো অনন্য। পানির সাথে লাগোয়া এসব প্রাসাদের দৃশ্য অসাধারণ। কখনো মনে হয় এগুলো যেন পানির ওপরেই তৈরি করা হয়েছে। জলে-স্থলে উসমানি সালতানাতের যে সমান দাপট ছিল, তা এ প্রাসাদগুলোর কথা ভাবলেও বোঝা যায়। এগুলো যেমন স্থলভাগের প্রাসাদ, জলভাগের প্রাসাদও। সেই দিনগুলোর কথা ভাবতেই পুলকিত হই, যখন এ প্রাসাদগুলো ব্যবহারকারী ফুরফুরে মেজাজের সুলতানগণ সালতানাতের দেখাশোনা করেছেন। এখানে ছোট্ট করে কেবল দুটি প্রাসাদের বর্ণনা লিখছি।

৯.০৫ ঘড়ির কাঁটার প্রাসাদ

অদ্ভুত নাম দিলাম। প্রাসাদের নামের সাথে আসলে ঘড়ির কাঁটার সম্পর্ক নেই৷ প্রাসাদটির নাম দলমাবাচ। এটি যদিও ইউরোপীয় আদলে তৈরি, এর বৈশিষ্ট্যে উসমানি ছাপ রয়েছে। এ প্রাসাদে ১৯৩৮ সালের ১০ নভেম্বর সকাল ৯টা ৫ মিনিটে মোস্তফা কামাল আতাতুর্ক মৃত্যুবরণ করেন। সেই থেকে প্রাসাদের পুরোনো ঘড়িগুলোর কাঁটা ৯টা ৫ মিনিটে থামিয়ে রাখা হয়েছে। সময়টা আতাতুর্কপ্রেমী তুর্কিদের কাছে অনেক গুরুত্বপূর্ণ। প্রতি বছর ১০ নভেম্বর এই সময় এই ঘড়িগুলোর মতো পুরো তুরস্ক থেমে যায়। রাস্তায় চলন্ত গাড়ি, হাঁটতে থাকা মানুষ, চলতে থাকা কথাবার্তা, কলকারখানা সবকিছুকেই থামিয়ে দেওয়া হয়।

সুলতান প্রথম আবদুল মাজিদের নির্দেশে প্রাসাদটি নির্মাণ করা হয়। ১৩ বছর ধরে এর নির্মাণকাজ চলেছিল, যা সমাপ্ত হয় ১৮৫৬ সালে। তারপর ১৯২২ সাল পর্যন্ত, অর্থাৎ প্রথম আবদুল মাজিদের শাসনকাল থেকে দ্বিতীয় আবদুল মাজিদের শাসনকাল পর্যন্ত অর্ধশতাব্দীর বেশি সময় এটিকে উসমানি সালতানাতের প্রশাসনিক কেন্দ্র হিসাবে ব্যবহার করা হয়েছে। এখন এটি একটি দারুণ দর্শনীয় স্থান শুধু। নির্মাণের পেছনে ৫ মিলিয়ন উসমানি স্বর্ণমুদ্রা ব্যয়িত হয়ে সালতানাত দেউলিয়া হতে বসেছিল।

প্রাসাদটির ডিজাইন করেছিলেন কারাতে বালিয়ান ও তার ছেলে, যারা সেই সময়ের প্রসিদ্ধ আমেরিকান স্থপতি ছিলেন। বসফরাস বা স্থলের মূল সড়ক থেকে সহজেই প্রাসাদটি দেখে চোখ জুড়ানো যেতে পারে৷ এমনিতে সকাল ৯টা থেকে বিকাল ৪টা পর্যন্ত ভেতরে ঘুরেফিরে দেখার সুযোগ আছে। প্রাসাদের বসফরাসের দিকের গেটটি অত্যন্ত সুন্দর লাগে।

তোপকাপি প্রাসাদ

দলমাবাচ প্রাসাদের পূর্বে তোপকাপি প্রাসাদই ছিল উসমানি সাম্রাজ্যের প্রশাসনিক কর্মকাণ্ডের কেন্দ্র। সুলতান প্রথম আবদুল মাজিদের নির্দেশেই এ কেন্দ্র দলমাবাচ প্রাসাদে স্থানান্তর করা হয়। সুলতান দ্বিতীয় মুহাম্মাদ আল-ফাতিহের নির্দেশে প্রাসাদটি নির্মিত হয়েছিল। ১৮৫৬ সালের পূর্ব পর্যন্ত প্রাসাদটি সাম্রাজ্যের সবকিছুর কেন্দ্র ছিল। এখান থেকেই বৃহত্তর উসমানি বিশ্ব শাসন করেছেন উসমানি সুলতানগণ। তারা এ প্রাসাদেই বাস করতেন। এখানে টাঁকশাল, মসজিদ, হাসপাতাল সবই ছিল। ১৯২৪ সালের ৩ এপ্রিল প্রাসাদটিকে জাদুঘর হিসাবে ঘোষণা করা হয়। ১৯৮৫ সালে ইউনেস্কো একে বিশ্বের ঐতিহ্যবাহী দর্শনীয় স্থানগুলোর একটি বলে ঘোষণা দেয়।

তোপকাপি প্রাসাদেই খেলাফতের নিদর্শনগুলো সংরক্ষণ করা হয়েছিল। সেইসাথে এখানে আরও বহু ইসলামি নিদর্শন রয়েছে। মুসা আলাইহিস সালামের লাঠি, দাউদ আলাইহিস সালামের তরবারি, ইয়াহিয়া আলাইহিস সালামের সহিফা, ইউসুফ আলাইহিস সালামের পাগড়ি, ইবরাহিম আলাইহিস সালামের ব্যবহৃত পাত্র এবং আমাদের নবীজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের ব্যবহৃত কিছু পবিত্র নিদর্শন এগুলোর মধ্যে অন্যতম।

জাঁকজমকে এটিই ছিল উসমানি আমলের সেরা প্রাসাদ। প্রসিদ্ধ আয়া সোফিয়ার পেছন থেকে এর সীমানা শুরু হয়েছে। মারমারা সাগর, বসফরাস প্রণালি, গোল্ডেন হর্ন খাড়িঘেরা উপদ্বীপে পাহাড়ের ওপর এ বিশাল প্রাসাদটির অবস্থান। গাঢ় নীল জলরাশি থেকে গাম্ভীর্যে ভরা তোপকাপি প্রাসাদের দৃশ্য অসাধারণ লাগে।

Source
A Trip to Istanbul Web এবং অন্যান্য
Back to top button
error: উঁহু, কপি করতে চান নাকি!