
রিভিউ লেখার আনুমানিক সময় : ২০১৭-১৮ সাল
আমি জানি, মালালা ইউসাফজাই বিতর্কিতা। ‘আই অ্যাম মালালা’ একটি বিতর্কিত বই। জানি, তবু, বইটি পড়ে আমার অন্যরকম ভালোলাগা অনুভূত হয়েছিল, আমি তা অস্বীকার কেন করব?
বইটি পড়তে শুরু করার পর ল্যাপটপে যখন এর পৃষ্ঠাসংখ্যা দেখতে পেয়েছিলাম তিনশর বেশি, খুবই ভালো লেগেছিল। তবে মন বলছিল, আরও যদি বেশি হতো!
এই দুয়েক বছরে শখানেক উপন্যাস পড়েছি, বিভিন্ন বিষয়ভিত্তিক বই এই চার-পাঁচ বছরে তো আরও কতই পড়েছি। এত কেন ভালো লাগেনি ওসব!
এর কারণ হয়ে থাকতে পারে, আন্দোলন-সংগ্রাম আমার খুবই পছন্দের। তা ছাড়া দেখেছি, যখনই কোনো বিপ্লবীর জীবনী আমার হাতে এসেছে, তা পড়তে অনেক ভালো লেগেছে। এই ভালো লাগার কারণ কি আমার বিপ্লবী হতে চাওয়া? জানি না।
আই অ্যাম মালালা, আমি পড়ছিলাম আর ভাবছিলাম, এখন না হয় রেখে দেওয়া যাক, শেষ করলে তো শেষই হয়ে গেল! মন বলছিল, আহা! কোনোদিনও যদি এ বইটি পড়া শেষ না হতো! শত পৃষ্ঠার নয়, হাজার পৃষ্ঠার নয়, এ বইটি যদি লক্ষ-কোটি পৃষ্ঠার হতো!
সবার অনুভূতি এক হবে, এমন তো কোনো কথা নেই। আমার মতো অনুভূতি, হতে পারে, আর কোনো পাঠকেরই হয়নি। হতে পারে, এ পৃথিবীর আমিই একমাত্র পাঠক, যার হৃদয়ের গভীরে এ বই অন্যরকম দাগ কেটেছে।
মালালা ইউসাফজাইয়ের একজন শিক্ষক, যার কাছে মালালা ইংরেজি প্রাইভেট পড়ত, তিনি মালালার কাঁধে ব্যাগ ঝুলানো একটি ছবি বয়েজ স্কুলের দেয়ালে টাঙিয়ে রেখেছিলেন, খুবই সুন্দর লেগেছে সেটি। আমি যে মেয়েলি সৌন্দর্যে মুগ্ধ হয়েছি, এরকম কিন্তু সত্যিই নয়। ছবিটি দেখার পর অনেকবারই অনেক সময় ধরে আমি মালালার জায়গায় নিজেকে দাঁড় করিয়ে একমনে ভেবেছি। আমি একটি বই হাতে ঠায় দাঁড়িয়ে আছি, গভীর মনোযোগের সাথে দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে পড়ছি বইটি। আমার ছবিটি আমার একজন স্যার অন্য সব শিক্ষার্থীদের অনুপ্রাণিত করতে স্কুলের দেয়ালে টাঙিয়ে রেখেছেন। ভাবতে ভালো লেগেছে।
আমার কোনো বন্ধু নেই। হয়তো তাই, মালালার বান্ধবীদের সাথে তার আনন্দের মুহূর্তগুলোয় আমিও আনন্দ অনুভব করেছি, ভেবেছি যদি হতো আমারও কয়েকজন এমন প্রাণের বন্ধু! স্কুলের বা দাখিল মাদরাসার কাউকেই আমার তেমন ভালো লাগেনি। কারও সাথে মিলিনি, মিশিনি। তা ছাড়া আমার শ্রেণিশিক্ষকদের, পাঠদানে তাদের দায়িত্বশীলতার অভাবের কারণে, ভালো লাগেনি। শেষে ইচ্ছা করে ক্লাস করা ত্যাগ করেছি। নবম-দশম শ্রেণিতে এসে, এই দুই বছরে দুই কি তিন দিন মাত্র ক্লাস করেছি। তথাপি পরীক্ষায়, আমার বদলে আমার বন্ধুরা ফেইল করে বসত, যদি আমি তাতে অংশ না নিতাম, অথচ তারা নিয়মিত ক্লাস করা শিক্ষার্থী ছিল।
বইটি পড়ার পর কতদিন ভেবেছি, যে বাসটি করে মালালা তার বান্ধবীদের সাথে বাড়ি ফিরছিল, তাতে বসে আছি আমি আর আমার বন্ধুরা। গুলিটা মালালাকে করা হলো না, হলো আমাকে! সত্যি বলছি, আমি এমনটিই ভেবেছি।
আমার বন্ধুরা আমাকে হাসপাতালে নিয়ে গেল, মুহূর্তে সংবাদ রটে গেল সারা দেশে। মাসউদ নামের একটি ছেলে, যে দেশজুড়ে বক্তৃতা করেছে শিক্ষা ও শান্তির বিষয়ে, সে গুলিবিদ্ধ। দেশজুড়ে আমার জন্য দোয়ার মাহফিল হতে থাকল। আসলে ভাবতে আমার ভালো লাগে খুব।
লক্ষ-কোটি মানুষের মাঝে আমি নাম করতে চাই, ব্যাপারটা এরকম নয়, বরং কোটি কোটি মানুষের আমি পেতে চাই হৃদয়ের ভালোবাসাটুকু।
বইটি সংগ্রহ করতে নিচের অ্যাফিলিয়েট লিংক ব্যবহার করুন—
ইংরেজি : I AM MALALA
বাংলা : আই অ্যাম মালালা
(বইয়ের নামের ওপর ক্লিক করুন)